ইশাক (রহঃ) ইবনুূু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহমুদ ইবনুূু রাবী’ আনসারী (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন, (শৈশবে তাঁর দেখা) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা তাঁর ভাল স্মরণ আছে এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের বাড়ির কূপ থেকে (পানি মুখে নিয়ে বরকতের জন্য) তার মুখমণ্ডলে যে ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন সে কোথাও তার ভাল স্মরণ আছে। মাহমুদ (রহঃ) বলেন যে, ইতবান ইবনুূু মালিক আনসারী (রাঃ)-কে [যিনি ছিলেন বদর জিহাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে উপস্থিত বদরী সাহাবীগণের অন্যতম] বলতে শুনেছেন যে, আমি আমার কাওম বনূ সালিমের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করতাম। আমার ও তাদের (কাওমের মসজিদের) মধ্যে বিদ্যমান একটি উপত্যকা। উপত্যকা বৃষ্টি হলে আমার মসজিদ গমনে অন্তরায় সৃষ্টি করতো। এবং এ উপত্যকা অতিক্রম করে তাদের মসজদে যাওয়া আমার জন্য কষ্টকর হতো। তাই আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে হাজির হয়ে আরয করলাম, (ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম !) আমি আমার দৃষ্টিশক্তির ঘাটতি অনুভব করছি (এ ছাড়া) আমার ও আমার গোত্রের মধ্যকার উপত্যকাটি বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয়ে যায়। তখন তা পার হওয়া আমার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই আমার একান্ত আশা যা আপনি শুভাগমন করে (বরকত স্বরূপ) আমার ঘরের কোন স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন; আমি সে স্থানটিকে মূসা ল্লা (সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থানরূপে নির্ধারিত) করে নিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অচিরেই তা করবো। পরের দিন সূর্যের উত্তাপ যেদিন বেড়ে গেল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বক্র (রাঃ) (আমার বাড়িতে) তাশরীফ আনলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে স্বাগত জানালাম, তিনি উপবেশন না করেই আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার ঘরের কোন জায়গায় আমার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা তুমি পছন্দ কর? যে স্থানে তাঁর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা আমার মনঃপূত ছিল, তাঁকে আমি সে স্থানের দিকে ইশারা করে (দেখিয়ে) দিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাক্বীর বললেন, আমরা সারিবদ্ধভাবে তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। তিনি দু’ রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সালাম ফিরালেন। তাঁর সালাম ফেরানোর সময় আমরাও সালাম ফিরালাম। এরপর তাঁর উদ্দেশ্যে যে খাযীরা প্রস্তুত করা হচ্ছিল তা আহারের জন্য তাঁর প্রত্যাগমনে আমি বলম্ব ঘটালাম। ইতিমধ্যে মহল্লার লোকের আমার বাড়ীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অবস্থান সংবাদ শুনতে পেয়ে তাঁদের কিছু লোক এসে গেলেন। এমন কি আমার ঘরে অনেক লোকের সমাগম ঘটলো। তাঁদের একজন বললেন, মালিক ইবনুূু দুখায়শিন্) করল কি? তাঁকে দখছি না যে? তাঁদের একজন জবাব দল, সে মুনাফিক! আল্লাহও তাঁর রাসূল) কে মুহাব্বাত করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ এমন কথা বলবে না। তুমি কি লক্ষ্য করছ না, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ উচ্চারন করছে। সে ব্যাক্তি বলল, আল্লাহও তাঁর রাসূল) ই সমধিক অবগত। তবে আল্লাহর কসম! আমরা মুনাফিকদের সাথেই তার ভালবাসা ও আলাপ-আলোচনা দেখতে পাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ আল্লাহ পাক সে ব্যাক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ উচ্চারন করে। মাহমূদ (রাঃ) বলেন, এক যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে একদল লোকের কাছে বর্ণনা করলাম তাঁদের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী আবূ আইয়ূব (আনসারী) (রাঃ) ছিলেন। তিনি সে যুদ্ধে ওফাত পেয়েছিলেন। আর ইয়াযীদ ইবনুূু মু’আবিয়া (রাঃ) রোমানদের দেশে তাদের আমীর ছিলেন। আবূ আইয়ূব (রাঃ) আমার বর্ণিত হাদিসটি অস্বীকার করে বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি যে কথা বলেছ তা যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন তা আমি বিশ্বাস করতে পারি না। ফলে তা আমার কাছে ভারী মনে হল। তখন আমি আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, যদি এ যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তিনি আমাকে নিরাপদ রাখেন, তাহলে আমি ইত্বান ইবনুূু মালিক (রাঃ)-কে তাঁর কওমের মসজিদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবো, যদি তাঁকে জীবিত অবস্থায় পেয়ে যাই। এরপর আমি ফিরে চললাম এবং হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা উমরার নিয়্যাতে ইহ্রাম করলাম। তারপর সফর করতে করতে আমি মদিনায় উপনীত হয়ে বনূ সালিম গোত্রে উপস্থিত হলাম। দেখতে পেলাম ইত্বান (রাঃ) যিনি তখন একজন বৃদ্ধ ও অন্ধ ব্যাক্তি কওমের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করছেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলে আমি তাঁকে সালাম দিলাম এবং আমার পরিচয় দিয়ে উক্ত হাদীস সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি প্রথমবারের মতই অবিকল আমাকে হাদীসখানা শোনালেন।